দিনের বেশির ভাগ সময় রান্নার চুলায় হয় গ্যাস থাকে না, নয়তো গ্যাসের চাপ খুবই কম থাকে। কয়েক মাস ধরেই রাজধানীর শাহজাহানপুর, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, কাজীপাড়া, রায়েরবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় এ অবস্থা চলছে। প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতি রাজধানীর পাশের জেলা গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ অন্য বড় শহরগুলোতেও। চুলায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস থাকুক বা চুলায় গ্যাস নেই, তবু মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টানা থাকুক, একজন গ্রাহককে মাসে গ্যাস বিল (দুই চুলা) দিতে হয় ১ হাজার ৮০ টাকা। এই বিল এখন ৫১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। গ্যাস বিতরণ সংস্থাগুলোর মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব মানা হলে দুই চুলার ক্ষেত্রে মাসে বিল আসবে ১ হাজার ৫৯২ টাকা। অন্যদিকে এক চুলার জন্য এখন মাসে বিল দিতে হয় ৯৯০ টাকা। এই বিলও ৩৯০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত তিতাসের অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করে জানাচ্ছেন গ্রাহকেরা। কেউ কেউ ফেসবুকেও পোস্ট দিচ্ছেন ভোগান্তির কথা জানিয়ে। বেশির ভাগের অভিযোগ, রাতে কয়েক ঘণ্টা থাকলেও দিনে একদমই গ্যাস থাকে না চুলায়। রায়েরবাজার মাদ্রাসা গলির বাসিন্দা মো. হাছান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১১টার দিকে গ্যাস আসে, সকাল ছয়টায় চলে যায়। কিন্তু মাসে ঠিকই বিল দিতে হচ্ছে। আবার রান্নার জন্য এলপিজি সিলিন্ডারও কিনতে হচ্ছে। এক সিলিন্ডারে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো। একই অভিযোগ করলেন মোহাম্মদপুরের গৃহিণী কামরুন্নেছা রুহী। তিনি বলেন, আগে সকাল আটটা পর্যন্ত রান্না করা যেত। এখন সেই সুযোগও নেই। এমনিতেই বাজারে বাড়তি খরচ, এর সঙ্গে গ্যাসের খরচ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। দিনে ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেলে শিল্প–আবাসিকের চাহিদার অনেকখানি পূরণ করা সম্ভব হয়। এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৫০ কোটি ঘনফুটেরও কম। ডলার–সংকটে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতেও উৎপাদন কমেছে। আমদানি বাড়ানো গেলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না দিয়ে বিল বাড়ানোর প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এই সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও জ্বালানিবিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, চুলায় ঠিকমতো গ্যাস না থাকলেও গ্রাহককে পুরো বিলই দিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রান্নার চুলায় গ্যাস না দিয়ে এলপিজির বাজার বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর স্বার্থ আছে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ কষ্টে আছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তা আসে কীভাবে?